প্রকাশিত: ২০/০১/২০১৭ ৮:৩৬ এএম

রাঙামাটি প্রতিনিধি ::
বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করায় গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে টানা প্রায় দুই মাস ধরে শারীরিক ও অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে রাঙামাটির পাহাড়ি মেয়ে জোসনা চাকমার (২২) ওপর। স্বগোত্রীয় কিছু দুর্বৃত্ত সম্প্রতি জেলার নানিয়ারচর এলাকায় তার ওপর এ নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করেন ঘটনার শিকার জোসনা চাকমা। জোসনার স্বামীর নাম অপু চন্দ্র সিংহ।

নানিয়ারচর উপজেলার নানাকুরম নামক দুর্গম পাহাড়ি গ্রামবাসী জহর লাল চাকমা ও রত্না চাকমার মেয়ে জোসনা চাকমা বলেন, গত ১৮ নভেম্বর দুপুরের দিকে বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তারা নিজেদের ইউপিডিএফের লোক বলে পরিচয় দেয়। এরপর গলায় শেকল দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখা হয় তাকে। এভাবে টানা প্রায় দুই মাস ধরে আটকে রেখে তার ওপর বেধড়ক মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন চালায় স্বগোত্রের দুর্বৃত্তরা। শেষে সুযোগ বুঝে জীবনবাজি রেখে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। গভীর রাতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাঙামাটি সদরের কুতুকছড়ি সেনাক্যাম্পে। গতকাল সকালে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দেন জোসনা চাকমা। এ সময় তার স্বামী অপু চন্দ্র সিংহও উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জোসনা চাকমা বলেন, তিনি ২০০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর চলে যান চট্টগ্রামে গার্মেন্টসের চাকরিতে। থাকতেন চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায়। সেখানে পরিচয় ঘটে কুমিল্লার আলীশ্বর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন চন্দ্র সিংহ ও গীতারাণী সিংহের ছেলে অপু চন্দ্র সিংহের সঙ্গে। ধর্মে তারাও বৌদ্ধ। অপু চট্টগ্রামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। এসময় একে অপরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে গত বছর ১৮ জুলাই চট্টগ্রামে আদালতের মাধ্যমে বিয়ের হলফনামা সম্পাদন করি। পাশাপাশি ধর্মীয় রীতিনীতিও পালন করি। এরপর স্বামী-স্ত্রী চট্টগ্রামে বসবাসের কয়েক মাস পর বাবা-মা’র সম্মতি ও পরামর্শে সামাজিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে দু’জনেই নানিয়ারচরের নানাকুরুমে আমাদের গ্রামের বাড়ি যাই।

জোসনা আরো বলেন, বাবা-মা’র বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় গত বছর ১৮ নভেম্বর। দুপুরের দিকে অতর্কিত বিয়ে বাড়িতে হানা দেয় অস্ত্রধারী চার যুবক। তারা সবাই উপজাতি। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আমাদের বর-কনে দু’জনকেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তখন তারা নিজেদের ইউপিডিএফের লোক বলে পরিচয় দেয়। পরে রাস্তার অর্ধেক পথ থেকে আমার বর অপু চন্দ্র সিংহকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে কিছুক্ষণ পর পাঠানোর কথা বলা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমাকে গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় নিজের জাতির ছেলে রেখে কেন বাঙালি বিয়ে করেছি, সেই অপরাধে আমার ওপর দিনরাত বেদম মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন চালায় দুর্বৃত্তরা। এভাবে প্রথমে রাঙামাটি সদরের কুতুকছড়ির ডলুছড়ির কালাবিচা চাকমার বাড়িতে তিন সপ্তাহ, চোংড়াছড়ির শান্তি চাকমার বাড়িতে প্রায় এক সপ্তাহের অধিক এবং শেষে শুকরছড়ির আনন্দ মণি চাকমার বাড়িতে তিন সপ্তাহ রাখা হয়েছে। পরে অবশ্য শিকলের বাঁধ খুলে দেয়া হয়। এর মধ্যে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক ডিভোর্স লেটারে আমার স্বাক্ষর নেয়া হয় এবং অন্যের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য ঠিকঠাক করা হয়। সর্বশেষ জীবনবাজি রেখে আনন্দ মণি চাকমার বাড়ি থেকে ১৬ জানুয়ারি গভীর রাতে পালিয়ে এসে কুতুকছড়ি সেনাক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। পরদিন নানিয়ারচর থানায় পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

১৮ জানুয়ারি রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করে আমার ইচ্ছাতে স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেন আদালত। তাকে বাঁচাতে সর্বাত্মক সহায়তা দেয়ায় আদালত, সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জোসনা চাকমা।

সংবাদ সম্মেলনে অপু চন্দ্র সিংহ ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সহায়তা না করলে আমার স্ত্রীকে জীবিত ফিরে আসার কোনো সুযোগ ছিল না। তিনি ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

এ বিষয়ে নানিয়ারচর থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, কুতুকছড়ি সেনাক্যাম্পে সেনাবাহিনী আমাদের কাছে জোসনা চাকমাকে হস্তান্তর করার পর সে স্বামী অপুর কাছে ফিরে যেতে আকুতি জানায়। পরে জোসনা চাকমা বুধবার রাঙামাটি আইনজীবী এড. আবছার আলীর মাধ্যমে রাঙামাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. মোহসিনের আদালতে স্বামীর জিম্মায় দিতে আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জোসনা চাকমাকে স্বামী অপুর জিম্মায় দিতে আদেশ দেন। তবে এ বিষয়ে কোন মামলা রুজু হয়নি বলে জানিয়েছেন নানিয়ারচর থানার ওসি মো. আবদুল লতিফ। বর্তমানে জোসনা চাকমা স্বামী অপুর সিং এর জিম্মায় রয়েছেন।

পাঠকের মতামত

সাংবাদিক জসিম আজাদের বসতভিটা দখলের ঘটনায় বাবু সহ ৩ জন কারাগারে

কক্সবাজারের উখিয়ায় সাংবাদিকের বসতভিটা দখলের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাহফুজ উদ্দিন বাবু ও তাঁর দুই সহযোগীকে ...

বাঁচানো গেল না শিশু আয়মানকেও

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন শিশু আয়মান ...